Shankarlal bhattacharya biography of donald

সত্যজিৎকে নিয়ে

July 29,
আমার একটা বদভ্যাস আছে - সত্যজিৎকে নিয়ে কোন লেখা দেখলে সেখানে যেনো হুমড়ি খেয়ে পড়ি। আরো যদি তার নাম হয় 'সত্যজিৎকে নিয়ে' তাহলে না এক্সপ্লোর করে যাই কোথায়!

বইয়ের শুরুটা হয় লেখককে সত্যজিতের দেয়া এক ইন্টারভিউ থেকে। মনে হলো, যাক ঠিক দিকেই এগোচ্ছি। সেসময়কার বড় মাপের সেলিব্রেটিদের মধ্যে একমাত্র সত্যজিৎ ই ছিলেন যিনি নিজের ফোন টা নিজে রিসিভ করতেন (কোনো পিএ-টিয়ে দিয়ে নয়), আর কেউ এলে নিজেই দরজাটা খুলে তাকে অভ্যর্থনা জানাতেন। শুনতে বিষয়টা 'নরমাল' মনে হলেও তা আসলে মানুষ সত্যজিৎ কতখানি উদার ছিলেন তা প্রকাশ করে। ইন্টারভিউতে সত্যজিতের সেই বিশাল স্টেটমেন্ট টা পাওয়া যায় যেটা হরহামেশাই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভেসে বেড়াতে দেখা যায়-

"আমার মনে হয়েছে নব্বই বছর বাঁচতে পারলে অন্তত আশি বছর অব্দি ছবি করতে পারি।"

সত্যজিতের লেখকের প্রশ্নের উত্তরে বলা এ লাইনটা যতবার শুনি ততবার একটা আফসোস চলে আসে।
কি হতো যদি সত্যজিৎ নব্বই বছর বাঁচতেন?

Makeup tough camila biography of george

আরো কিছু মনমাতানো ছবি আর চিত্রনাট্য উপহার পেতাম আমরা। আসলে কপালটা পোড়া আমাদেরই।

বড়দের উপন্যাস কেন লেখেন না - এর উত্তরে তিনি বলেন,"আমার মনে হয় বড়দের উপন্যাস এর মত কোন থিম মাথায় এলে তা ফিল্ম সিনারিও তে চলে যাবে। কোনও থিম বা প্লট বা চরিত্র এলে আমি চিত্রনাট্যেই সেসব ট্রান্সফার করা  দেবো।"
আহা! ডেডিকেশন!!

লেখালেখির বিষয়ে সত্যজিৎ জানান, তাঁর ঠাকুরদা ও পিতার প্রিয় 'সন্দেশ' পত্রিকাকে নতুন করে চালু করে জিইয়ে রাখার জন্যই তাঁকে কলম ধরতে হয়েছিলো। বলি যে, ফুলচন্দন পড়ুক সেই সমস্যা ও পরিস্থিতির মুখে, যা সত্যজিৎকে ফেলুদা, শঙ্কু আর তাড়িনী খুড়োর কাহিনী লিখতে বাধ্য করেছিল।

ইন্টারভিউটা শেষ হবার পর বইটার উদ্দেশ্য অন্যদিকে ধাবিত হয়; এবার বিষয় সত্যজিতের সৃষ্টি নিয়ে। আর তা বিভিন্ন বিশিষ্ট্য জনার দেয়া ভাষণ, পত্রিকায় প্রকাশিত লেখা ও স্মৃতিচারণ এর সংকলন।

এ বইতে সত্যজিতের চয়েস অব মিউজিক আর সঙ্গীতানুরাগ সম্পর্কে এক বিস্তর ধারণা পাওয়া যায়। বয়সের শেষের দিকে যখন তার মাথায় নতুন কোন প্লট কাজ করতো না, তখনো তার মস্তিষ্ক থেকে গান এতটুকু বিচ্যুত হয়নি। চিরকাল তিনি প্রিয় মোৎজার্ট, বেটোফেন, বাখ ও বারোক মিউজিক নিয়েই কাটিয়ে দিতে পারবেন এমনটাই জানিয়েছিলেন তিঁনি।

শেষের দিকে বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালী আর সত্যজিতের পথের পাঁচালীর এক তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা আছে যেটা আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। আর্থার কোন্যান ডয়েল, অগাথা ক্রিস্টি এঁদের সৃষ্টির সাথে তাঁর (সত্যজিতের) সৃষ্টির তুলনা করা হয়েছে যেটা সবথেকে আকর্ষণীয় বিষয়; আর সত্যজিৎ সেটার যোগ্যও বটে। কিন্তু কিছু জায়গায় অহেতুক শার্লক হোমস, আর্সেন লুপা, মোৎজার্ট, বেটোফেন এঁদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিশ্লেষণ অপ্রাসঙ্গিক লেগেছে আমার কাছে। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল, সত্যজিৎকে নিয়ে কোন লেখা নয় যেন বিশ্ব সাহিত্য সমালোচনা পড়ছি। লেখাটায় 'সত্যজিৎকে নিয়ে' আলোচনা একবারেই কম, সত্যজিতের 'কর্ম' নিয়ে বেশি।